প্রিয় বন্ধুরা আজকের পোষ্টটি করলাম

টিনএজ মেয়ে যে কথা হয় না বলা


টিনএজ শুনলেই যারা টিনএজ পার হয়ে এসেছেন তারা ভোগেন নস্টালজিয়ায়, টিনএজের মেয়েরা হয় শিহরিত আর তাদের অভিভাবকরা হন চিন্তিত, টিনএজ থারটিন টু নাইনটিন বা তেরো থেকে ঊনিশ বছর। অদ্ভুত এক সময়। হঠাৎ ঘটে যাওয়া বিপুল শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ধাক্কায় হতবিহ্বল মেয়েদের ওপর ভর করে একরাশ লজ্জা। তাই এ সময় হওয়া অনেক অসুখ তারা গোপন রাখে, বলতে পারে না নিজের মাকে পর্যন্ত এবং তারই ফলে এমন অসুখ ক্ষেত্রবিশেষে জটিল পর্যায়ে উপনীত হতে পারে। আজ
বলতে না পারা কিছু অসুখ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ব্রেস্ট বা স্তনের চাকা
সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সের মেয়েদের স্তনে ২-সেন্টিমিটার সাইজের চাকা হয়ে থাকে, যাকে ফাইব্রোঅ্যাডিনোমা ব্রেস্ট বলা হয়। তবে কোনো ক্ষেত্রে এ চাকা ৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় ও দ্রুত বাড়তে থাকে। একে জয়েন্ট ফাইব্রোঅ্যাডিনোমা বলেমেয়েরা এ সমস্যার কথা ৯৫ পারসেন্ট ক্ষেত্রেই লজ্জায় কাউকে বলতে পারে না ও প্রচণ্ড মানসিক অস্খিরতায় ভোগে।
প্রতিকার
এ সমস্যা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এফএনএসি ও আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে শনাক্তকরণের পর চিকিৎসা শুরু হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। তবে চাকার উপস্খিতির কারণে মনে ভীতি বা অস্বস্তি থাকলে অথবা ফাইব্রোঅ্যাডিনোমা বেশি বড় হয়ে গেলে ও শুধু কসমেটিক কারণে অপারেশন করা হয়ে থাকে
এনাল ফিশার বা গুয়ায় ব্যাথা
মলদ্বারে ব্যথা, দেখা গেছে অনিয়মিত মলত্যাগ ও বিশেষ ধরনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে টিনএজের মেয়েরা এ সমস্যায় ভোগে। এ ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়, যা সাধারণত ২-ঘন্টা পর্যন্ত থাকে। সেই সঙ্গে মলদ্বার দিয়ে তাজা রক্তও পড়তে পারে। বাংলাদেশে শুধু টিনএজার নয়, অধিকাংশ মহিলা এ রোগ হলে একেবারেই গোপন রাখে ও নীরবে প্রচণ্ড ব্যথা সহ্য করে।
প্রতিকার
দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই মলদ্বারে মলম লাগালে ও লাকজেটিভ খাওয়ার মাধ্যমেই রোগের উপশম হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ এনাল স্ফিংটারকে রিলাক্স করতে পারলেই রোগী ব্যথামুক্ত হয়। তবে এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। একে স্ফিংটারোটমি বলা হয়ে থাকে।
মাসিকের সমস্যা রক্ত স্যাব
টিনএজে মাসিকের বা পিরিয়ডের অনেক সমস্যা দেখা যায়।
. ডিসমেনোরিয়া বা ঋতুস্রাবের সময় পেট ব্যথা : এ ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ওই ব্যথার কারণে স্বাভাবিক জীবনের অনেক কাজ পর্যন্ত করা হয়ে ওঠে না। এ ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের মাথাব্যথা, সারা শরীর ব্যথা ও বমিও হয়ে থাকে।
প্রতিকার
ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পেট ব্যথার অন্য কোনো কারণ আছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। অন্য কোনো কারণ পাওয়া না গেলে রোগীকে ভালোমতো বোঝাতে পারলে রোগ অনেকাংশে ভালো হয়ে যায়। কোনো কোনো সময় ব্যথার ওষুধ ও ক্ষেত্রবিশেষে ওরাল পিল ইত্যাদি খাওয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
. অনিয়মিত ঋতুস্রাব : মাসিক শুরু হওয়ার পর দুই-তিন মাস বন্ধ থাকে আবার শুরু হয়। আবার কিছুদিন বন্ধ থাকে।
প্রতিকার
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যা আপনা থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে প্রথমেই আলট্রাসনোগ্রাম ও হরমোন অ্যাসে করে অন্য কোনো সমস্যার অনুপস্খিতি নিশ্চিত করতে হবে।
. ওভারিয়ান টিউমার : বলতে না পারা যেসব অসুখ সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে তা হলো ওভারিয়ান টিউমার বা ওভারিয়ান সিস্ট। গাইনোকোলজিস্টরা বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চলে প্র্যাকটিস করেন বা করেছেন তারা জানেন এমন নজির অনেক রয়েছে। ওভারিয়ান টিউমারে আক্রান্ত টিনএজের অবিবাহিত মেয়েকে কোনো রকম ডাক্তারের পরামর্শ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কুমারী গর্ভবতী হিসেবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অশিক্ষিত সমাজ চিহ্নিত করেছে এবং মেয়েটিকে ও তার পরিবারকে অপরিসীম লাঞ্ছনায় জর্জরিত করেছে। কারণ এ অসুখে তলপেটে ক্রমেই বড় হওয়া চাকা দেখা দেয়। সে সঙ্গে মাসিক ঋতুস্রাব অনিয়মিত থাকতে পারে। এ চাকা অনেক বড় আকার ধারণ করতে পারে। দীর্ঘদিন এ সমস্যা গোপন রাখা হলে কিছু ভয়াবহ সমস্যা দেখা দেয়, যেমন­জরায়ুর কিছু অংশ ফেটে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ ও সেখান থেকে শক পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া সিস্ট ফেটে যাওয়া, ইনফেকশন, প্রচণ্ড পেট ব্যথা, ইনটেস্টিনাল অবস্ট্রাকশন ইত্যাদি হতে পারে। এ অবস্খার সবই মেডিকেল ইমার্জেন্সি ও সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তকরণের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীর অবস্খা গুরুতর পর্যায়ে উপনীত হতে পারে। কোনো কোনো সময় দীর্ঘদিন থাকার ফলে ওভারিয়ান টিউমার ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
প্রতিকার
চিকিৎসা ল্যাপারোটমি ও সিস্টেকটমি, রোগীর বয়স ও টিউমারের ধরন বিবেচনা করে ওফোরেক্টমি বা সালসিঙ্গে ওফোরেক্টমি করা হয়ে থাকে।
নাভি চুলকানি অ্যাকিউট অ্যাপেন্ডিসাইটস
অনেক সময় মেয়েরা নাভির চারপাশে চিনচিনে ব্যথা বা তলপেটের ডানদিকের ব্যথা চুপচাপ সহ্য করে ও কাউকে কিছু বলে না। এ ব্যথা তিন দিন পার হয়ে গেলে এপেন্ডিকুলর লাম্প ও কোনো কোনো সময় গ্যাগ্রিন ও ব্রাস্ট অ্যাপেনডিক্সের মতো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
প্রতিকার
টিনএজে মেয়েদের মনোজগতে ঘটে বিশাল পরিবর্তন­যা তাদের চলাফেরা, আচরণবিধি, সর্বোপরি চিন্তা-চেতনাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। সে সঙ্গে যদি মা-বাবার অন্তর্দ্বন্দ্ব, কলহ, বাবা অথবা মায়ের অনুপস্খিতি, যৌন নির্যাতন, শারীরিক অসুস্খতা ইত্যাদি থাকে তবে মানসিক চাপ মানসিক রোগে রূপ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যাগুলো হলো­
ডিপার্সোনালাইজেশন : আত্মবিস্মৃতি ও নিজেকে অন্ত:সত্ত্বা মনে করা।
ইলিউশন : চারপাশের জিনিসগুলোকে অস্বাভাবিক কিছু ধরে নেয়া।
হ্যালুসিনেশন : অস্বাভাবিক ও অসম্ভব কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করা।
ডিপ্রেশন : পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়া, সব সময় চুপচাপ থাকা, কোনো কিছুতেই আগ্রহ না দেখানো ইত্যাদি। এ অবস্খা থেকে অনেক সময় আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়।
সিজোফেন্সনিয়া : অস্বাভাবিক আচরণ, সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, অস্খিরতা, অসংলগ্ন কথা ও যে কোনো অবস্খা ও পরিস্খিতিতে বিধিবহির্ভূত আচরণ করতে দেখা যায়।
হিস্টিরিয়া : হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা অজ্ঞান হওয়ার প্রবণতা।
প্রতিকার
এসব সমস্যা হলে অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে আলোচনা বা কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। তবে কোনো কোনো সময়ে সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
অভিভাবকদের ভূমিকা
টিনএজের মেয়েদের এসব সমস্যা সমাধানে অভিভাবকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের সময় দিন, বন্ধুর মতো আচরণ করুন, যে কোনো সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন। টিনএজে পদার্পণ করার আগেই তাদের আসন্ন পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে বুঝিয়ে দিন। তাদের প্রতি লক্ষ রাখুন। যে কোনো সমস্যায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের চিকিৎসকের মতামত নিন। দেখবেন, আপনার টিনএজ মেয়েটিকে আপনি উপহার দিতে পারবেন রোগ ও দুশ্চিন্তামুক্ত একটি দারুণ সুন্দর জীবন। 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন