প্রিয় বন্ধুরা আজকের পোষ্টটি করলাম

মানসিক রোগের উপসর্গ - কথাবার্তা বা চিন্তায় অস্বাভাবিকতা



আগের পোস্টে মানসিক রোগের পূর্ব লক্ষণ নিয়ে লিখেছিলাম। কারো কোন পূর্ব লক্ষণ থাকলে একটু সচেতন হলেই প্রতিকার পাওয়া যায়। আজ থেকে লিখব মানসিক রোগের উপসর্গ নিয়ে। কারো মধ্যে এধরনের উপসর্গ থাকলে ব্যাপারটি সিরিয়াসলি নেয়া উচিত।
কথাবার্তা বা চিন্তায় অস্বাভাবিকতা: মানসিক রোগীদের মধ্যে একটি কথাকে বার বার বলা বা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কখনো কখনো কথার মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক সময় তারা দুর্বোধ্য কথা বলে। একা একা কথা বলে। মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে যা তার শিক্ষা, ব্যক্তিত্ব কিংবা পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাসের কথা বলে যা অবাস্তব ও অলীক। অলীক বিশ্বাস হলো এমন একটি বস্তুতে বিশ্বাস করা বাস্তবে যার কোন অস্তিত্ব নেই। মানসিক অসুস্থ ব্যক্তি তার নিজস্ব আবেগ ও অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত হয় এবং কারো যুক্তি তারা গ্রহণ করে না। অলীক বিশ্বাসের ফলে সে আত্মহত্যা, খুন বা অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত করতে পারে। অনেক মানসিক রোগী অলীকে বিশ্বাস করে কিন্তু অন্যকে তা বুঝতে দেয় না। রোগী তার চারপাশের সবাইকে শত্রু বলে গন্য করতে পারে। তার বিশ্বাস অন্যেরা তাকে আক্রমণ, হয়রানি, প্রতারণা কিংবা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। রোগীর মধ্যে মারাত্মক সন্দেহপ্রবণতা দেখা দেয়। রোগী নিজেকে বিপুল সম্পদের বা অর্থের মালিক ভাবতে পারে। তার উপর কোন বিশেষ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে বলেও কেউ কেউ বিশ্বাস করে।



মানসিক রোগের অন্যান্য উপসর্গ

আগের পোস্টে মানসিক রোগের কিছু উপসর্গ নিয়ে লিখেছিলাম। আজকে লিখলাম মানসিক রোগের অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে।

প্রত্যক্ষকরণ বা উপলদ্ধি: ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা সব কিছু প্রত্যক্ষ করে থাকি। এই প্রত্যক্ষকরণ বা উপলদ্ধিতে অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পেলে সেটাকে মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উপলদ্ধিগত অস্বাভাবিকতা দুধরনের হতে পারে - ইল্যুশন ও হ্যালুসিনেশন।
আবেগের অস্বাভাবিকতা: একজন সুস্থ ব্যক্তি এবং একজন অসুস্থ ব্যক্তি একই উপায়ে তাদের আবেগ অনুভব প্রকাশ করতে পারে না। বিভিন্ন কারণে আবেগের পরিবর্তন ঘটে - তবে সেই পরিবর্তনকে স্থায়ী বলা যায় না। যাদের পরিবর্তনটা স্থায়ী হয়ে পড়ে তারা মানসিকভাবে অবশ্যই বিপর্যস্ত। কিছু কিছু বিষয় আবেগের অস্বাভাবিকতার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। যেমন: বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা, বিরক্তি।
বুদ্ধি লোপ: মানসিক রোগীদের বুদ্ধি লোপ পায়। একটি জিনিসকে বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লষণ করার ক্ষমতা তাদের কমে যায়।
স্মৃতিভ্রষ্ট: একটি লোক কোথা থেকে আসছে জিজ্ঞেস করলে ভিন্ন উত্তর পাওয়া যায়। সে ইচ্ছে করে মিথ্যে বলে না। আসলে সে নিজেই সব ভুলে যায়।
মুদ্রাদোষ: একই কথা বার বার বলা, একই অঙ্গ বার বার সঞ্চালন করাকে মুদ্রাদোষ বলে। মানসিক রোগীদের মধ্যে এই উপসর্গগুলো পরিলক্ষিত হয়।
মানসিক জটিলতা: এটা এমন এক অবচেতন ধারনা যা আবদমিত ইচ্ছা বা আবেগজনিত অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত এবং আচরণে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যেমন: সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স, ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স, ইলেকট্রা কমপ্লেক্স, ঈপিডাস কমপ্লেক্স ইত্যাদি।
সন্দেহপ্রবণতা: মানসিক রোগীদের মধ্যে মারাত্মক সন্দেহপ্রবণতা দেখা যায়। বন্ধুদের বা আশেপাশের মানুষদের সে শত্রু বলে মনে করে। তার বিরুদ্ধে সবাই চক্রান্তে লিপ্ত এমনটি সে মনে করে।
অহেতুক ভয়: মানসিক রোগীরা অহেতুক ভয়ের শিকার হতে পারে। অনেকে ছোট ও নিরীহ প্রাণী দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অন্ধকার বা নির্জনতায় আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে অন্যের সামনে কথা বলতে পারে না।
অহেতুক রোগভীতি: রোগী মনে করে সে কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে।
শুচিবাই: মানসিক রোগীদের মধ্যে শুচিবায়ুগ্রস্ততা পরিলক্ষিত হয়। কেউ ঘন্টার পর ঘন্টা হাত-মুখ ধুচ্ছে তো ধুচ্ছেই - মনে হয় তারপরও ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না।
মানসিকভাবে সুস্থ লোককে কিভাবে চেনা যায়

মানসিক রোগীরা অনেক সময় সাধারণের চোখ এড়িয়ে যায় তাদের বিচক্ষণতার কারণে। কোন কোন মানসিক রোগীর উপসর্গ এত নগন্য যে, কেউ বুঝে উঠতে পারে না তার অসুস্থতার মাত্রা কততুকু। কী কী কারণে আপনি একজন লোককে মানসিকভাবে সুস্থ আখ্যায়িত করবেন?

মানসিকভাবে সুস্থ লোকের যেসব বৈশিষ্ট্য থাকে তা হলো:
১। নিজের সম্পর্কে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে অনুভব করেন।
২। তিনি নিজেকে বেশি বড় কিংবা বেশি ছোট ভাবেন না।
৩। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি সচেতন।
৪। তিনি যুক্তিসঙ্গত নিরাপদবোধ করেন।
৫। অবাঞ্ছিত কিছু মেনে নিতে তিনি প্রস্তুত থাকেন।
৬। নিজের প্রতি এবং পারিপার্শ্বিকতার প্রতি তার আগ্রহ জন্মাতে পারে।
৭। সিদ্ধান্ত গ্রহনে তিনি সক্ষম।
৮। তিনি নিজস্ব আবেগ ধরে রাখতে পারেন। কেউ তার সমালোচনা করলে তিনি তা সহ্য করতে পারেন।
৯। তিনি তার পারিপার্শ্বিকতার ব্যাপারে সচেতন এবং তার সাথে তিনি মানিয়ে চলতে পারেন।
১০। সমাজের অংশ হিসেবে তিনি নিজেকে অন্যের প্রতি দায়িত্বসম্পন্ন ভাবেন।
১১। তিনি প্রত্যেকের সাথে বন্ধুসুলভ ব্যাবহার করেন এবং অন্যকে বিশ্বাস করেন।
১২। তিনি দাম্পত্যজীবন উপভোগ করতে পারেনএবং সন্তান-সন্ততিদের ভালোবাসা ও স্নেহ দিয়ে ভরিয়ে তুলতে পারেন।
১৩। তিনি কাজের মধ্যে আনন্দ খোঁজেন এবং স্বতস্ফুর্তভাবে সকল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে পারেন।
১৪। তিনি অতীতের কোন বেদনাদায়ক স্মৃতি ভুলে থাকতে পারেন এবং অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
১৫। অজানা ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি ঘাবড়ে যান না।

দুটি কথা:মানসিক রোগ সম্পর্কে আমার লেখা পোস্টগুলো বিশেষ করে রোগের লক্ষণগুলো পড়ার পর অনেকের বিরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। আমাদের দেশে অধিকাংশ লোক মানসিক রোগী বলতে বুঝে থাকেন রাস্তায় নগ্ন হয়ে চিকার করতে করতে দৌড়ে যাওয়া কোন বদ্ধ উন্মাদ। কিন্তু বাইরের আবরণে মানসিক রোগীকে চিহ্নিত করা কি সম্ভব?
যে ভদ্রলোকটি ফিটফাট হয়ে অফিসে যান, লোকজনের সাথে কথা বলেন প্রাণ খুলে, ব্যক্তিগত জীবনে স ও ধার্মিক, কিন্তু বাসায় ফিরেই কারণে-অকারণে স্ত্রীকে নির্যাতন করেন। কেননা তাঁর ধারণা স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে মাঝেমাঝে নির্যাতন করতে হয়। তিনি কি মানসিক রোগী নন?
এক লোকের মুদ্রাদোষ তিনি কারো সাথে কথা বলার সময় একটু পরপর হাত দিয়ে ঐ লোককে স্পর্শ করেন বা সামান্য ধাক্কা দেন। এ অভ্যাসটি শুরুর পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে লোকটির ধারণা কেউ তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে না বা কেউ তার কথায় গুরুত্ব দেয় না। তাই ১০০% মনোযোগ আকর্ষণের জন্য লোকটি এভাবে স্পর্শ করে বা সামান্য ধাক্কা দেয়, যা এখন মুদ্রদোষে পরিণত হয়েছে। তিনি কি মানসিক রোগী নন? এ সমস্যাকে লোকটি মুদ্রাদোষ হিসেবে মেনে নিলেও মানসিক রোগ হিসেবে কি মেনে নেবে?
আমার এসব পোস্ট মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে লেখা। "Prevention is better than cure."


1 টি মন্তব্য: