‘বন্ধুত্ব’- এই অতি পরিচিত
শব্দটির সঠিক সংজ্ঞা কি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব? সম্ভবত না।
কারণ এই শব্দটির নেটওয়ার্ক একটি চার অক্ষরের
শব্দ ‘ভালবাসা’-কে অতিক্রম করে বহুদূর পর্যন্ত
বিস্তৃত। তাই সে মানে না কোনো ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ কিংবা
বয়সের পার্থক্য। আর ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসের মতো সামাজিক
যোগাযোগ সাইটের কল্যাণে এখন এই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে বিশ্বজনীন।
তবু অনেকের মনের মাঝে একটি প্রশ্ন ঠিকই ঘুরপাক
খায়। বিপরীত লিঙ্গের দু’জন মানুষের মাঝে ‘কেবল
বন্ধুত্ব’ নামক সম্পর্ক কি আসলেই থাকা সম্ভব? এই
প্রশ্নে আমরা সবাই আসলে দুই দলে ভাগ হয়ে যাই। কেউ বলে, “হ্যা, সম্ভব”। কারণ আমরা দেখছি,
দু’জন নারী-পুরুষ(যাদের মাঝে বন্ধুত্ব আছে) একসাথে
খাচ্ছে, অফিসে কাজ করছে, কখনো বা ঘুরতেও
যাচ্ছে- তবে কেবলই বন্ধু হিসেবে। নিজেদের বন্ধুত্বের সীমানা তখন কেউই অতিক্রম করছে
না।
আবার কেউ কেউ জানায় তীব্র প্রতিবাদ। তারা তখন
দু’জন ক্লাসমেটের মাঝে সম্পর্ক বা এরকম আরো নানা উদাহরণ টেনে এনে বলে- “না,
এটা সম্ভব না”।
আচ্ছা, আমরা তো আমাদের
নিজেদের মনের কথা বললাম এই বন্ধুত্ব নিয়ে। কিন্তু বিজ্ঞান কি বলে বিপরীত লিঙ্গের
সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে? চলুন জেনে নেয়া যাক সে সম্পর্কে। পুরো
লেখাটা পড়লে যেমন জানতে পারবেন নানা মজার তথ্য, তেমনি আপনার
বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটির প্রতি একটু রাগ হওয়াও অস্বাভাবিক হবে না!
তো এই ‘কেবল বন্ধুত্ব’
নামক টপিক, যা কি না এতদিন কেবল রূপালি পর্দাকে
মাতিয়ে এসেছে, তাকে এবার বিজ্ঞানীরা নিয়ে এলেন সায়েন্স
ল্যাবে। এজন্য তারা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলের ৮৮ জোড়া বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুকে
নিয়ে একটি জরিপ চালালেন। তবে জরিপটি চালানোর সময় সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করা
হয়েছিলো যাতে এক বন্ধুর মতামত আরেক বন্ধু জানতে না পারে সেজন্য।
তারা প্রত্যেক জোড়া বন্ধুকে প্রথমে আলাদা
করলেন। এরপর একজনের হাতে ধরিয়ে দিলেন কিছু প্রশ্ন যেখানে অপর বন্ধুটি সম্পর্কে তার
নানা রকম অনুভূতির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিলো। ৮৮ জোড়া বন্ধুর জন্য ছিলো এই একই
ব্যবস্থা।
আর এই জরিপের ফলাফল যা ছিলো তাকে এক বাক্যে বলা
যায়- ‘এইডা কিছু হইলো?’ টাইপের!!!
বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুর প্রতি নারী, পুরুষ
দুই দলের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো অনেকটাই আলাদা।
নারীদের তুলনায় পুরুষেরা তাদের বিপরীত লিঙ্গের
বন্ধুদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট ছিলেন।
একইভাবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মাঝে আরেকটি
ধারণার প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে। আর তা হলো- “আমার বিপরীত
লিঙ্গের বন্ধুটিও হয়তো আমাকে পছন্দ করে” টাইপের
চিন্তাভাবনা, যা ছিলো পুরোই ভুল। প্রকৃতপক্ষে নিজেদের যেকোনো
ধরণের রোম্যান্টিক অনুভূতিকেই পুরুষেরা ‘উভমুখী বিক্রিয়া’
বলে ধরে নিয়েছিলেন।
এবার আসা যাক নারীদের কথায়। নারীরা কিন্তু
তাদের বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটিকে শুধুই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাই
ছেলে-বন্ধুদের(BOYFRIEND না কিন্তু :P) প্রতি
তাদের আলাদা কোনো আকর্ষণের ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়নি। যা ছিলো, তা
কেবলই ‘বন্ধুসুলভ আকর্ষণ’!
তারা এটাও মনে করেছেন যে, তাদের
বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুরাও এই সম্পর্কটিকে তাদের মতোই ‘কেবল বন্ধুত্ব’
হিসেবে গ্রহণ করেছেন!
ফলে দেখা গেলো, নারী-পুরুষ দুই
প্রজাতিই বন্ধু সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণাটি দিনে দিনে বাড়িয়েই চলেছে।
এমনকি ‘In a relationship’- টাইপের
মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব পাতানোতেও দুই প্রজাতির মাঝে বেশ ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে।
পুরুষরা তাদের বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুর সাথে(যিনি কি না In a relationship স্ট্যাটাসের
অন্তর্গত) সব কিছু জেনেও একটি ‘রোম্যান্টিক ডেটিং’-এ
বের হবার ব্যাপারে ছিলেন একেবারেই পজিটিভ!
তবে নারীরা এ ব্যাপারে ছিলেন বেশ সেনসিটিভ এবং
তাই তাদের বেশিভাগের উত্তরই ছিলো নেগেটিভ...
এতকিছু নিয়ে গবেষণা করার পর গবেষকরা এই
সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে, বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে ‘কেবল
বন্ধুত্ব’ নামক সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখা একজন নারীর তুলনায়
একজন পুরুষের জন্য বেশ কষ্টকরই!
আর তাই তারা পুরুষদের জন্য এ সম্পর্কটিকে ‘Just
Friendship’ না বলে বললেন ‘Partial Friendship’ :-D।
তাহলে কি নারী-পুরুষের মাঝে বন্ধুত্ত্বের
সম্পর্ক সম্ভব নয়? গবেষকরা তখন মুচকি হেসে জানালেন- “আপনি
যদি একজন নারী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু আপনি যদি
পুরুষ হন, তাহলে আপনার জন্য অনেকসময় এটা বেশ জটিলই হয়ে
যাবে...”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন